মুখ বলতে বোঝায় ঠোঁট, চোয়াল, তালু, জিহ্বা, দাঁত, মাড়ি, মুখের তলদেশ, টনসিল ও পাশের এলাকা। মুখের ক্যানসার হওয়ার কারণ ধূমপান, তামাক সেবন এবং পান, চুন ও জর্দা সেবন। আমাদের দেশে পান, চুন, জর্দা বা সাদাপাতা সেবন খুব জনপ্রিয়। মেহমান বাড়িতে এলে এক খিলি পান এবং সুগন্ধি জর্দা না দিলে ইজ্জত থাকে নাকি? অনুষ্ঠান, মেজবানি বা হোস্টেলের ফিস্টের সঙ্গে পানের খিলি থাকা অত্যাবশ্যক।
জর্দা, সাদাপাতা ছাড়াও তামাকের আছে অনেক ব্যবহার। যেমন- নৈশ্যি, খৈনী, চরস এবং গুল হিসেবে ব্যবহারে অনেকে অভ্যস্ত। এগুলোয় নিকোটিন থাকায় সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং একটি সুখবোধ অনুভূত হয়। কিন্তু এর সঙ্গে আছে কার্সিনোজেন, যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এ ধোঁয়াবিহীন তামাকের মধ্যে থাকে ২৪টি কার্সিনোজেন এবং তামাকের ধোঁয়ার মধ্যে থাকে প্রায় ৩৫টি কার্সিনোজেন।
তামাকের কার্সিনোজেন হলো এক ধরনের কেমিক্যাল, যা ক্যানসার সৃষ্টি করে বা করতে চায়। ধূমপানের কারণে মুখ ছাড়াও ফুসফুস, স্বরনালি, গলনালি, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনি, ব্লাডার এবং জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে পারে। মুখের ক্যানসারের অন্য কারণগুলো হলো- অসমান বা অমসৃণ দাঁত, যা মুখে ক্ষতের সৃষ্টি করে। মুখ নিয়মিত পরীক্ষার না করা। ভাইরাসের পুনঃপুন সংক্রমণ এবং সুষম খাবার গ্রহণ না করা। লিউকেপিকিয়া থাকা। মদ্যপান করা ইত্যাদি।
উপসর্গ : দীর্ঘদিনের স্থায়ী ক্ষত, যা চিকিৎসায় সারছে না এবং ব্যথা; খাবার চিবোতে ও গিলতে অসুবিধা; জিহ্বার সামনের মুক্ত অংশের মার্জিনে হলে সহজে দেখা যায়; মুখ গহ্বরের তলদেশে হলে ব্যথা বেশি হয়; মাড়িতে হলে ব্যথা হতে পারে এবং খাবার চিবোতে সমস্যা হয়। গলায় লিম্পনোড ফুলে যায়।
রোগ নির্ণয় : ক্যানসার যত আগে নির্ণয় করা যাবে, আরোগ্য তত সহজ হবে। নিশ্চিতভাবে ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বায়োপসি করে প্যাথলজি টেস্ট করতে হয়। মুখের ক্যানসার নির্ণয়ে খুব সহজেই বায়োপসি করা যায়। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সহজে এটা সম্পন্ন করা যেতে পারে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং যে কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে এ বায়োপসি করা যায়।
চিকিৎসা : চিকিৎসার নির্ভর করে রোগের পর্যায়ের ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে হলে অপারেশনের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায় গলগ্রন্থ দেখা দিলে বা আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে সার্জারি করে নিরাময় সম্ভব। কোমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে রোগ নিরাময় কিছুটা সম্ভব হলেও রোগটি চতুর্থ পর্যায়ে চলে গেলে আর নিরাময় সম্ভব হয় না। তখন ব্যথা উপশম করা এবং রোগীর পুষ্টি জোগান দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। মুখের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চতুর্থ পর্যায়ে যেতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
প্রতিরোধ : ‘প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম’ কথাটি মনীষীদের। ব্যক্তিগত কুঅভ্যাস থেকে বিরত থাকা এবং নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মুখে কোনো ক্ষত দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আসুন, কুঅভ্যাস ত্যাগ করে সুন্দর সমাজ গড়ি।
Leave a Reply